আমাদের কিশোরগঞ্জ -OUR KISHOREGONJ
আমাদের কিশোরগঞ্জ
শুষ্ক মৌসুমে যতদূর চোখ যায় শুধুই ফসলি জমি আর ধূলিওড়া মেঠোপথ।
আর বর্ষায় নীল জলরাশি ডুবিয়ে দেয় দিগন্ত সীমার সবটুকু। এরই মাঝে জেগে থাকা ৩৫ কিলোমিটার
পিচঢালা অলওয়েদার রোড হাওরের বুক চিরে দুভাগ করে এগিয়ে যায়। সড়কটি মিঠামইনের সঙ্গে
বন্ধন তৈরি করে দেয় ইটনা ও অষ্টগ্রামের।
এদিকে হাওরের উত্তাল ঢেউয়ের দোল খেতে নৌকায় চড়তে তো হবে অবশ্যই। তখনই
চোখে পড়বে দূরের জমাট কচুরিপানা। পরে ভুল ভাঙবে। একেকটি কচুরিপানার স্তুপ তো একেকটি
গ্রাম। এসব গ্রামবাসীর গর্ব এখন তাদের তিন উপজেলার মধ্যে সেতুবন্ধন সেই সংযোগ সড়ক ।
যেখানে ভ্রমণে প্রতিদিনই ভিড় করেন হাজারো পর্যটক। নিকলীর বুকে পিচঢালা পথে রূপকথার
গল্প বুনে পর্যটকরা।
সড়কটি পর্যটকদের কাছে ভ্রমণ-বিলাসের উপকরণ মনে হলেও স্থানীয়দের জন্য আর্শীবাদ।
'বর্ষাকলে নাউ শুকনাকালে পাও' - স্থানীয়দের মধ্যে যুগ ধরে চলা এই প্রবাদকে হাওরের জলে
ডুবিয়ে দিয়েছে এই সড়ক। সড়কটি হাওরের প্রাণভোমরায় পরিণত হয়েছে। বলছিলাম হাওর-বাওরের
দেশ কিশোরগঞ্জের কথা। সেখানের নিকলী হাওর আর মিঠামইনের জলের বুক চিরে চলে যাওয়া মসৃণ
সড়কের কথা।
গত অর্থবছরে ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণ
করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এতে ব্যয় হয় এক হাজার ২৬৮ কোটি টাকা।
এই সড়কে ভ্রমণ বিলাসে মেতেছেন পর্যটকরা। ইতিমধ্যে ড্রোন প্রযুক্তির সহায়তায় পাখির চোখে সেই সড়ককে দেখেছে ভ্রমণপিপাসুরা। যেন উত্তাল জলের ওপর দিয়ে কালো মসৃণ কার্পেট বিছিয়ে দিয়েছে কেউ।
সড়কটি কিশোরগঞ্জের তিন হাওর উপজেলা ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রামকে এক করেছে।
সারা বছরজুড়েই এ রাস্তায় চলাচল করা যাচ্ছে। রাস্তাটি হাওরের চেহারাই বদলে দিয়েছে। এটিই
এখন পর্যটকদের মূল আকর্ষণ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সড়কটির ছবিতে সয়লাব। নেটিজেনদের অনেকের প্রোফাইলে শোভিত
হচ্ছে এই সড়ক। ভ্রমণভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার হচ্ছে নানা কায়দায় তোলা সড়কটির ছবি।
কেউ সড়কটির ফাঁকে স্থাপিত মনকাড়া সেতুগুলোয় দাঁড়িয়ে সেলফি নিয়ে নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া
অ্যাকাউন্টে পোস্ট করছেন।
এমনই একদিন দ্য ব্যাকপ্যাকার্স নামের একটি ভ্রমণপিপাসু গ্রুপে দেয়া নিকলী
ও মিঠামইন হাওর এবং সেই দিগন্ত বিস্তৃত সড়কের বেশ কয়েকটি ছবি আমাকে মোহিত করে। যোগ
দেই এক ঝাঁক তারুণ্যনির্ভর দলটির সঙ্গে। দলটি দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ভ্রমণপিপাসুদের
নিয়ে বেরিরে আসছে নিয়মিতই ।
১২২টি হাওরের দেশ কিশোরগঞ্জে। ভাষাহীন অনুভূতির প্রশান্তি ছুঁয়ে যায় হৃদয়ে।
হাওর তখন সাগর মনে হয়।
সত্যি অসাধারণ সব দৃশ্য। কথিত আছে, তাজমহল দেখে যাওয়া পর্যটকরা একেকভাবে
এর সৌন্দর্য প্রকাশ করেন। কারণ সকালের নরম তুলতুলে রোদের শুভ্র তাজমহল থেকে দুপুর বেলায়
জ্বলজ্বলে আলো ঠিকরে পড়ে। বিকেলের মন্দা আলোয় যে তাজমহল দেখা যায় তার সঙ্গে সকাল-দুপুরের
দৃশ্যকে কেউ মেলাতে পারে না।
Comments
Post a Comment